20200811

কাকাবাবু কি সত্যিই ৫আগস্ট জন্মেছিলেন?

অজয় দাশগুপ্ত

আজ কমরেড মুজফ্‌ফর আহ্‌মদের ১৩২তম জন্মদিবস। এবারে করোনা আবহে শারীরিক দুরত্ববিধি এবং স্বাস্থ্যসুরক্ষা সংক্রান্ত সতর্কতা অবলম্বন করেই কমরেড মুজফ্‌ফর আহ্‌মদের জন্মদিবস উদযাপিত হবে। একথা আমরা সবাই জানি যে ১৮৮৯ সালের ৫আগস্ট অবিভক্ত বাংলার নোয়াখালি জেলার (বর্তমানে বাংলাদেশে) সন্দ্বীপে তিনি জন্মেছিলেন। 

কিন্তু কমরেড মুজফ্‌ফর আহ্‌মদ বা সর্বজনশ্রদ্ধেয় কাকাবাবুর জন্মদিবস সত্যিই ৫আগস্ট কিনা এবিষয়ে সংশয় রয়েছে! কেন একথা বলছি? তাহলে আসুন, দেখি কাকাবাবু নিজেই তাঁর জন্মদিন সম্পর্কে কী বলেছেন! 

কাকাবাবু তাঁর জীবন ও কমিউনিস্ট পার্টি গঠন করতে গিয়ে তাঁর অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বিশদে লিখেছেন ‘আমার জীবন ও ভারতের কমিউনিষ্ট পার্টি’ বইটিতে। ন্যাশনাল বুক এজেন্সি প্রকাশিত এই বইটি কমিউনিস্ট পার্টির কর্মীদের পার্টিজীবনের গোড়াতেই অবশ্যপাঠ্য। এই বইতেই তিনি লিখছেন: ‘‘বাংলা ১২৯৬ সালের শ্রাবণ মাসের কোন এক সোমবারে আমি এই দ্বীপের মুছাপুর গ্রামে জন্মেছি। আমাদের দরিদ্র পরিবারের কারুরই জন্মবার্ষিকী পালিত হত না। আমার জন্মতারিখও কোনদিন পালিত হয়নি। তাই জন্মের তারিখ আমার মনে নেই, মায়ের মুখে শুনে শুধু সাল, মাস ও বারের কথাই আমার মনে আটকে রয়েছে। ১২৯৬ সালের শ্রাবণ মাসের ৭ই, ১৪ই, ২১শে ও ২৮শে তারিখ সোমবার ছিল। খ্রিস্টীয় সনের হিসাবে এই তারিখগুলি ১৮৮৯ সালের ২২শে জুলাই, ২৯শে জুলাই, ৫ই আগস্ট ও ১২ই আগস্ট। এই চারটি তারিখের মধ্যে কোনটি ছিল আমার প্রকৃত জন্মদিন তা জানার আর কোন সম্ভাবনা নেই। সাধারণত আগস্ট মাসকেই আমি আমার জন্মের মাস বলে থাকি।’’ 

ফলে তিনি আদৌ ৫আগস্ট জন্মেছিলেন কিনা এবিষয়ে প্রশ্ন আছে। কিন্তু কাকাবাবুর জন্মদিবস পালনের সঙ্গে ভারতের কমিউনিস্ট আন্দোলনে যে তীব্র মতাদর্শগত সংগ্রাম জড়িত ছিল, সেই ঐতিহ্যকে কখনো অস্বীকার করা যায় না। কমিউনিস্ট পার্টিতে কখনও জন্মদিবস বা মৃত্যুদিবস উদ্‌যাপন করা হয় না। মতাদর্শগত সংগ্রামের একটা বিশেষ প্রেক্ষিতেই কমরেড মুজ্‌ফফর আহ্‌মদের জন্মদিবস উদ্‌যাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীকালে যাঁরা সিপিআই(এম)-এ যুক্ত হয়েছিলেন, অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির সেই অংশের অধিকাংশই তখন হয় কারাগারে, নয় আত্মগোপন করে আন্ডারগ্রাউন্ডে। প্রকাশ্যে তখন কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি করার উপায় ছিল না। অথচ বিরাট অংশের পার্টিকর্মী ও সমর্থক-দরদীদের কাছে বামপন্থী বিপ্লবী অংশের পক্ষ থেকে বার্তা পৌঁছানো দরকার ছিল। সেকারণেই জন্মদিবস পালনের এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই প্রসঙ্গে বিমান বসু লিখেছেন: ‘‘সাধারণভাবে আমাদের পার্টির কোনো নেতার জন্মদিন বা মৃত্যুদিন প্রকাশ্যে পালন করার রীতি চালু নেই। কিন্তু কমরেড মুজফ্‌ফর আহ্‌মদের ক্ষেত্রে ব্যাতিক্রমী সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ১৯৬৩ সালে মতাদর্শগত ক্ষেত্রে এবং পার্টি সংগঠনের কার্যকলাপ পরিচালনা করতে বিতর্ক দেখা দিলে প্রকাশ্য পার্টি, জেল পার্টি ও আন্ডারগ্রাউন্ড পার্টির যৌথ সিদ্ধান্তে কলকাতায় রামমোহন লাইব্রেরি হলে প্রথমবার তাঁর জন্মদিন পালিত হয়। ব্যক্তিগতভাবে মুজফ্‌ফর সাহেব এই জন্মদিন পালনের ঘোরতর বিরোধী ছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘জন্মদিন পালনের মধ্যে দিয়ে ব্যক্তিপূজার বিষয়টি এসে যায়।’ তৎকালীন রাজ্য সম্পাদক কমরেড প্রমোদ দাশগুপ্ত তাঁকে বুঝিয়েছিলেন, ‘আপনার বিষয়টি একটু আলাদা, কারণ আপনি আমাদের পার্টির শীলমোহর হয়ে গেছেন।’ উত্তরে মুজফ্‌ফর সাহেব বলেছিলেন, ‘তা আবার হয় নাকি!’’ (সূত্র: গণশক্তি, ৫ আগস্ট, ২০১৬) 

১৯৬৩ সালের ৫আগস্ট কলকাতায় রামমোহন লাইব্রেরি হলে প্রথমবার কমরেড মুজফ্‌ফর আহ্‌মদের জন্মদিবস বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী মোহিত মৈত্রের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। কেন জন্মদিবস পালন, তার এই ইতিহাস খুবই তাৎপর্যপূর্ণ ও শিক্ষণীয় 


কমরেড মুজফফর আহমদকে সর্বমোট আট বছর আত্মগোপন করে কাজ করতে হয়েছিল। মুজফফর আহমদ পার্টি ও বাইরের লোকের কাছ “কাকাবাবু” হিসেবেই পরিচিত ও জনপ্রিয় ছিলেন। তাঁর নিজস্ব বৈশিষ্ট্যপূর্ণ আচার-আচরণ ও ব্যবহারেও কাকাবাবুর মতই তাঁকে মনে হতো। বিশেষ করে সকলকেই তিনি স্নেহের চোখে দেখতেন। তিনি নারীদের প্রতি বিশেষ সম্মান দেখাতেন এবং অপরকে সেইমত ব্যবহার করতে শেখাতেন। কেন এবং কী করে কমরেড মুজফ্‌ফর আহ্‌মদ সবার ‘কাকাবাবু’ হয়ে উঠলেন, সেই ইতিহাসও খুবই আকর্ষণীয়। 

কাকাবাবু’ ডাকনাম প্রসঙ্গে কমরেড সরোজ মুখোপাধ্যায় লিখেছেন: ‘‘আত্মগোপন করার নিয়ম-কানুন, পুলিশের চোখ এড়িয়ে কাজ করা সতর্কতা অবলম্বনের বিধি-নিষেধগুলি তিনি (কমরেড মুজফফর আহমদ) অন্যান্য কর্মীদের শিখিয়ে দিতেন। ১৯৪০ সালে গোপন আবাসে চলে যাবার পর আমিও তাঁর কাছ থেকে এসব নিয়ম-কানুন শিখেছিলাম। তখন নানা কায়দায় আমরা ফ্ল্যাট বা বাড়িভাড়া করতাম। একবার আমরা একটা বড়ো ফ্ল্যাটভাড়া নিই। মুজফফর আহমদকে আমিই “কাকাবাবু” নাম দিই। এভাবে সমস্ত পরিবারটিকে সাজানো হয়। দুই একজন মহিলা কর্মীকেও আনা হলো স্বাভাবিক পারিবারিক আবহাওয়া সৃষ্টির জন্য। বাড়ির মালিককে যা বলা হলো তা হচ্ছে এইরূপ, কাকাবাবু জমিদার, অনেক টাকাপয়সা নিয়ে এপার বাংলায় এসেছেন, ভাইপোদের নিয়ে থাকেন। ভাইপোরা সন্ধ্যেবেলায় ফুর্তি করতে বের হয় আর সারাদিন বাড়িতে ঘুমোয়। কারণ রাত্রেই আমাদের বিভিন্ন গোপন আস্তানায় গিয়ে যোগাযোগ ও বৈঠক করা হতো। পাঁচুগোপাল ভাদুড়ীকে বড়দা ও সোমনাথ লাহিড়ীকে মেজদা করা হলো। আর আমি ছিলাম ছোড়দা.........।’’ (সূত্র: ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি ও আমরা; প্রথম খন্ড) 

পরবর্তীকালে পার্টি প্রকাশ্যে এলেও কমরেড মুজফ্‌ফর আহ্‌মদ সবার কাছে ‘কাকাবাবু’-ই থেকে যান। 

ভারতে কমিউনিস্ট আন্দোলনের এই পথিকৃৎ অমর বিপ্লবীকে তাঁর জন্মদিবসে লাল সেলাম জানাই। 

ছবি: ১৯৬৩সালের ৫আগস্ট রামমোহন লাইব্রেরি হলে কমরেড মুজফ্‌ফর আহ্‌মদের প্রথমবার জন্মদিবস উদ্‌যাপনের অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন মোহিত মৈত্র। ছবিটি সোহম দাশগুপ্তের ব্যক্তিগত সংগ্রহ থেকে প্রাপ্ত। 

৫আগস্ট, ২০২০

20200807

কমরেড মুজফ্‌ফর আহ্‌মদের জন্মদিনে আমাদের শপথ

 বিমান বসু

 

আজ ৫ অগাস্ট কমরেড মুজফ্‌ফর আহ্‌মদের ১৩২তম জন্মদিবস। ১৮৮৯ সালে আজকের তারিখে অধুনা বাংলাদেশের চট্টগ্রামের অন্তর্গত সন্দ্বীপ দ্বীপে তাঁর জন্ম। ১৯৭৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর তার জীবনাবসান হয়।

১৯১৭ সালে রুশ দেশে বিপ্লবের কথা জানার পর থেকেই কমরেড মুজফ্‌ফর আহ্‌মদ ভারতের বুকে কমিউনিস্ট পার্টি গড়ে তোলার কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন। একাজ তিনি শুরু করেছিলেন ভরা যৌবনে যা দৃঢ়তার সঙ্গে পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে চলেছিল। একথা সকলেই জানেন সে যুগে অনেকেই জাতীয় কংগ্রেসের পতাকার তলায় থেকে স্বাধীনতা সংগ্রামের কাজে নিজেদের যুক্ত করতেন। কমরেড মুজফ্‌ফর আহ্‌মদের মতো কয়েকজন যুবক সেই সময় একইসাথে দেশের শ্রমিক– কৃষকদের সংগঠিত করার কাজে নির্দিষ্ট দায়িত্ব পালন করেছিলেন। কংগ্রেসের অধিবেশনে তাঁরা যে বক্তব্য রাখতেন তাতে শ্রমিক কৃষকের স্বার্থ রক্ষা করার ক্ষেত্রে কিছু প্রস্তাবও উত্থাপন করতেন।

আমাদের পার্টি কোনও নেতার জন্মদিন বা মৃত্যুদিন পালনে সাধারণভাবে কোনও অনুষ্ঠানের আয়োজন করে না। কিন্তু বিশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ১৯৬৩ সালে তখনকার পার্টির নেতৃত্ব— যারা জেলে বন্দি ছিলেন, বাইরে প্রকাশ্যে এবং আত্মগোপনে কাজ করতেন তাঁরা সকলে আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন পার্টির পক্ষ থেকে কমরেড মুজফ্‌ফর আহ্‌মদের জন্মদিন পালন করা হবে। এ প্রশ্নে মুজফ্‌ফর সাহেব নিজে ঘোরতর আপত্তি তুলেছিলেন, কিন্তু তা গ্রাহ্য হয়নি। ১৯৬৩ সালে ৫ অগাস্ট কলকাতার রামমোহন হলে মুজফ্‌ফর আহ্‌মদের প্রথম জন্মদিন পালন করা হয়। এই সভায় রাজ্যের প্রায় সব জেলার প্রতিনিধি এবং গণফ্রন্টের নেতৃত্ব উপস্থিত ছিলেন।

আজ কোভিড-১৯ অতিমারীর আক্রমণের কারণে এবং সরকারি বিধিনিষেধ লাগু হওয়া ও যানবাহনের অভাবের ফলে কোনও হলেই রাজ্যের সব জেলার প্রতিনিধিদের নিয়ে এই কর্মসূচি পালন করা সম্ভব নয়। অবশ্যই ডিজিটাল ফর্মে মুজফ্‌ফর সাহেবের জন্মদিন পালন করার এবং যাঁরা সমসাময়িক কিংবা গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্বমূলক কোনও বিষয়ে বই লেখেন এবং মুজফ্‌ফর আহ্‌মদ স্মৃতি পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত হয়, তাদেরকে পুরস্কৃত করার কথা ঘোষণা করা হবে। ধারাবাহিকভাবে ৫৬ বছর পরে এইবার ৫৭ বছরে প্রথম প্রকাশ্য সভায় মুজফ্‌ফর আহ্‌মদের জন্মদিবস আয়োজনে ছেদ পড়ছে।

কমরেড মুজফ্‌ফর আহ্‌মদ ছিলেন শ্রমিক শ্রেণির বন্ধু, কৃষক সমাজের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় এবং সমাজ পরিবর্তন ও শোষণ ভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা অবসানের লড়াইতে অংশগ্রহণকারী সমস্ত মানুষের একান্ত সুহৃদ। তিনি প্রবাসে কমিউনিস্ট পার্টির গড়ে ওঠার ইতিহাস সম্পর্কে অর্থাৎ ১৯২০ সালের ১৭ অক্টোবর (পুরানো রশিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী তারিখ উল্লিখিত হলো) তাসখন্দে যে পার্টি গড়ে উঠেছিল সে সম্পর্কে নানাধরনের লেখা ও তথ্য সংগ্রহ করার ব্যাপারে বিশেষভাবে উদ্যোগী ছিলেন। সেই অনুযায়ী জাতীয় কংগ্রেসের সভায় আলোচনার পয়েন্টস নির্দিষ্ট করে নিতেন। তিনি সেই সময় বঙ্গ প্রদেশের পিসিসি (প্রভিন্সিয়াল কংগ্রেস কমিটি)’র সদস্য ছিলেন, এআইসিসি(অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস কমিটি)’রও সদস্য ছিলেন। কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনাল থেকে এবং ব্রিটেনের কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষ থেকে মুজফ্‌ফর আহ্‌মদের নামে চিঠি আসতো। সেই সব চিঠি তিনি সবসময় পেতেন না, বেশ কিছু পুলিশের গোয়েন্দা বাহিনীর হাতে চলে যেত, আবার কিছু পেতেন। এই কারণে পরে জাহাজে কাজ করা লোকজনের মাধ্যমে চিঠি পাঠানো শুরু হয়েছিল। এই সব উল্লেখ করার কারণ ১৯২৫ সালে কানপুরে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের আগে থেকেই মুজফ্‌ফর আহ্‌মদের কাছে বিদেশ থেকে চিঠিপত্র আসতো, এই তথ্য আজকের দিনে মনে রাখতেই হয়। মনে রাখতে হবে পরাধীন ভারতে কমিউনিস্ট পার্টি গড়ে তোলার কাজ ভীষণ ঝুঁকিপূর্ণ ছিল।

আজ করোনা অতিমারীর সময়ে এই ব্যাপারে কোনও স্পষ্ট মতামত দেবার মতো অবস্থায় আমি নেই যে ১৯১৮ সালে যে ধরনের মহামারী হয়েছিল সেই সম্পর্কে তিনি কী বলেছিলেন– তা দেখার সুযোগ আমার হয়নি। কিন্তু সেই সময় মার্কসবাদ-লেনিনবাদ আত্মস্থ করে, চর্চার যে অভ্যাসে তিনি ব্রতী ছিলেন তারই ফলশ্রুতিতে ১৯৩৩ সালে সম্মেলনে প্রতিনিধি হিসাবে উপস্থিত থেকে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। ভারতের বুকে শ্রমিক আন্দোলন, কৃষক আন্দোলন এবং পরে একটি গঠনতন্ত্রের ভিত্তিতে রাজনৈতিক লক্ষ্য, উদ্দেশ্য সম্পর্কে মার্কসবাদ–লেনিনবাদ সম্মত দিশা ঠিক করে এদেশে যথার্থ অর্থে কমিউনিস্ট পার্টি গড়ে উঠেছিল। ভারতে কমিউনিস্ট পার্টি গড়ে ওঠার ইতিহাস বর্ণনা করার জন্য একথা আমি উল্লেখ করছি না। পরাধীন ভারতে এবং স্বাধীনতার পরে নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে গণসংগঠন, আন্দোলন-সংগ্রাম এবং পার্টির কাজ পরিচালনা করে এগিয়েছে ভারতের তৎকালীন কমিউনিস্ট পার্টি। তবে বিভিন্ন সময়ে মার্কসবাদ-লেনিনবাদের আদর্শকে রক্ষা করতে এবং নানা বিচ্যুতির বিরুদ্ধে লড়াই সংগ্রাম পরিচালনা করতে হয়েছে। এই লড়াই সংগ্রামে কমরেড মুজফ্‌ফর আহমদ্‌ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি সবসময় বিশ্বাস করতেন যে পার্টির আদর্শ ও নীতি সব থেকে মূল্যবানতাই, তিনি বলতেন যে পার্টির স্বার্থ রক্ষা করা সকল পার্টি সদস্যের একনিষ্ঠ দায়িত্ব ও কর্তব্য হওয়া উচিত। পার্টির স্বার্থের উর্ধে তিনি বন্ধুত্বের সম্পর্ককে কখনো বড় করে দেখতেন না। তাই বলতেন, বন্ধুর থেকে পার্টি বড়।

১৯৬৪ সালে কলকাতায় অনুষ্ঠিত সপ্তম পার্টি কংগ্রেস ভারত রাষ্ট্রের চরিত্র বিশ্লেষণ করে অনেক আলোচনার ভিত্তিতে ‘পার্টি কর্মসূচি’ ও পার্টি ‘গঠনতন্ত্র’ তৈরি করে পার্টির ভিন্ন প্রক্রিয়ায় যাত্রা শুরু হয়। সপ্তম কংগ্রেসে সিদ্ধান্ত হয়ে ছিল পরবর্তী সময়ে পার্টির মতাদর্শগত দলিল তৈরি করা হবে যা ১৯৬৮ সালে বর্ধমানে অনুষ্ঠিত পার্টি প্লেনামে গৃহীত হয়েছিল। তখনকার সময়ে সংবাদ মাধ্যমে এবং সরকারের তরফে সেই পার্টিকে বামপন্থী কমিউনিস্ট পার্টি বলা হতো, পরে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী) বা সিপিআই(এম) নাম হয়। এই পর্বেও কমরেড মুজফ্‌ফর আহ্‌মদ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন, যদিও এক্ষেত্রে অনেকটা সময়জুড়ে কাজ করতে পারেননি, তাঁকে সরকার কারাগারে বন্দি করে রেখেছিল।

আজ কমরেড মুজফ্‌ফর আহ্‌মদের জন্মদিনে বর্তমানে দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে বিগত ২২তম পার্টি কংগ্রেসে যে বিষয় সমূহে আমাদের পার্টির পক্ষ থেকে রূপায়িত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে তার কিছু উল্লেখ করার প্রয়োজন। এতে আজকের দিনে তাঁর জন্মদিনে আমাদের শপথ সম্পর্কে ধারণা স্পষ্ট হবে। ২২ তম পার্টি কংগ্রেসের গৃহীত সিদ্ধান্ত সমূহতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘মোদী সরকারের অর্থনৈতিক নীতির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে হবে, নয়া উদারনীতির শিকার হওয়া শ্রমজীবি জনগণের সব অংশকে সমবেত করে কাজ, জমি, খাদ্য এবং জীবন–জীবিকার জন্য লড়াই সংগঠিত করতে হবে। সব স্বতঃস্ফূর্ত সংগ্রামে পার্টিকে হস্তক্ষেপ করতে হবে এবং তা এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সংগ্রামে পার্টি ও গণসংগঠনগুলিকে সংগ্রামের সামনের সারিতে থাকতে হবে। এই সংগ্রাম পরিচালনা করতে হবে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও মতাদর্শগত সবকটি ক্ষেত্রেই। সাম্প্রদায়িক শক্তির তৎপরতার মোকাবিলায় ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক শক্তির ব্যাপক মঞ্চ গড়ে তোলা দরকার’।

২২ তম পার্টি কংগ্রেসের রাজনৈতিক লাইন অধ্যায়ে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘মোদী সরকারের বিগত দিনের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বিচ্ছিন্নতাবাদী সাম্প্রদায়িক শক্তিকে বিচ্ছিন্ন করতে ও জনবিরোধী অর্থনৈতিক নীতি পালটাতে হলে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে সরাতেই হবে। সুতরাং প্রধান কর্তব্য হলো সমস্ত ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক শক্তিকে সমবেত করে বিজেপি ও তার মিত্রদের পরাস্ত করা। কিন্তু একাজ করতে হবে কংগ্রেস দলের সাথে রাজনৈতিক আঁতাত না করে। সংসদের মধ্যে অভিন্ন বিষয়ে কংগ্রেস ও অন্যান্য বিরোধী ধর্মনিরপেক্ষ  দলের সঙ্গে বোঝাপড়া হতে পারে, সংসদের বাইরে সাম্প্রদায়িকতার বিপদের বিরুদ্ধে জনগণের ব্যাপক সমাবেশের লক্ষ্যে সমস্ত বিরোধী ধর্মনিরপেক্ষ দলের সাথে আমাদের সহযোগিতা করতে হবে। শ্রেণি ও গণসংগঠনগুলীর যৌথ কর্মসূচিগুলি এমনভাবে করতে হবে যেন কংগ্রেস ও অন্যান্য বুর্জোয়া দলগুলির অনুগামী জনগণকে টেনে আনা যায়’।

এই পরিপ্রেক্ষিতেই করোনা অতিমারীর বিশেষ পরিবেশ পরিস্থিতি অনুযায়ী নানাভাবে জনগণের সাথে বিশেষ করে নির্যাতিত, নিপীড়িত যারা শ্রেণি শোষণের জাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছেন তাদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলাই হবে আমাদের আজকের কাজ। একইসাথে সময়ের বাধ্যবাধকতায় যে ধরনের আন্দোলন সংগ্রাম করা যায় সেভাবেই আন্দোলনে ব্রতী হতে হবে। ইতিমধ্যে ভারতের প্রায় সমস্ত কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন, কৃষক ও খেতমজুর সংগঠন, বিভিন্ন ফেডারেশনগুলি এবং অন্যান্য গণসংগঠনের সহযোগিতায় কয়েকটি শিল্পে ধর্মঘট সফল হয়েছে। কয়লা শিল্পে সর্বশেষ ধর্মঘট তো নতুন ইতিহাস তৈরি করেছে। শ্রমিক কর্মচারীরা সফল ধর্মঘট সংগঠিত করে করোনা ভাইরাসের আবহে এবং লকডাউন পরিস্থিতির মধ্যে থেকেই একদিকে শ্রেণি সংগ্রামকে তীব্র করার লক্ষ্যে, অন্যদিকে বিজেপি’র নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্যে রাজ্যে বিভিন্ন আঞ্চলিক দলের সরকারের দ্বারা মানুষে মানুষে যেভাবে বিভাজনের নীতি পরিচালিত হচ্ছে তার বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, ঐক্য, সংহতি, মেলবন্ধন গড়ে তোলার লক্ষ্যে আমাদের পথ চলতে হবে।

কমরেড মুজফ্‌ফর আহ্‌মদ পার্টি সংগঠনকে শক্তিশালী করতে চাইতেন জনগণের আন্দোলন সংগ্রামকে তীব্র করার লক্ষ্যে। আমাদের তাঁর জন্মদিনে শপথ নেওয়ার প্রয়োজন যেখানেই মানুষ অত্যাচারিত হচ্ছেন, নিপীড়িত হচ্ছেন তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। বিভিন্ন গণসংগঠনের নেতৃত্বে নিজস্ব আন্দোলন গড়ে তোলা আবার একইসাথে যুক্ত আন্দোলনের পথ ধরেও চলা– দুইই আমাদের কর্তব্য। এক মুহূর্তের জন্যেও বিস্মৃত হওয়া উচিত নয় যে কেন্দ্রীয় সরকার যেভাবে নতুন শিক্ষানীতি চালু করার কথা ঘোষণা করেছে তা সাধারণ মানুষের ছেলে মেয়েদের শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করার উদ্দেশ্যে। আবার ঘোষিত শিক্ষানীতি যে পদ্ধতিতে ঘোষিত হয়েছে স্বাধীন ভারতে তা নজিরবিহীন। শিক্ষা ভারতের সংবিধানের যৌথ তালিকাভুক্ত, ইংরেজিতে যাকে কনকারেন্ট লিস্ট বলে। কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য সরকারগুলির সাথে আলাপ আলোচনা করেই এব্যাপারে নির্দিষ্ট নীতি প্রনয়ন করবে– এটাই সাংবিধানিক পথনির্দেশ। শিক্ষার মতো একটি বিষয় যা জাতি গঠনের প্রশ্নের সাথে সংশ্লিষ্ট, সেক্ষেত্রে হঠাৎ কারোর মস্তিষ্কপ্রসূত কোনও কিছুকে কার্যকর করা যায় না, তিনি যেই হোন না কেন।  এতে শিক্ষাবিদদের, শিক্ষা বিষয়ক গবেষকদের মতামত নিতে হয়। আমাদের দেশে এর আগে শিক্ষানীতি বিষয়ক যেসব কমিশনগুলি আগে হয়েছে যেমন স্কুলশিক্ষার ক্ষেত্রে ১৯৫২ সালের মুদালিয়ার কমিশন, ১৯৬৪ সালে সামগ্রিক শিক্ষা বিষয়ক কোঠারি কমিশন এই সব ক্ষেত্রেই কমিশনের সুপারিশগুলি লোকসভায় পেশ করা হয়েছে, এবং সংসদে আলোচনার ভিত্তিতে সংযোজিত, সংশোধিত হয়ে তবে গৃহীত হয়েছে এবং তা রুপায়িত করা হয়েছে। কিন্তু এইবার আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্রস্তাবিত শিক্ষানীতিকে সংসদে পেশ না করেই, সংসদের মতামত না নিয়েই – একতরফাভাবে কার্যকর করার কথা ঘোষণা করে দিলেন। এই আচরণ কিসের ইঙ্গিত? এ হলো স্বৈরতান্ত্রিক কার্যকলাপ পরিচালনার একটি স্পষ্ট উদাহরণ। তথাকথিত হিন্দুত্ববাদী নীতি নিয়ে স্বৈরতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবার পরে এখন ফ্যাসিবাদের আগমন দেখার জন্য আমরা অপেক্ষা করবো কি?

একদিকে বিজেপি কেন্দ্রীয় সরকারের জনবিরোধী নীতি অগণতান্ত্রিক কার্যকলাপ স্বনির্ভর নীতির আড়ালে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের ছোট শরিক হওয়ার কর্মসূচি রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পে ঢালাও বিদেশি বিনিয়োগ ও বড় বড় কর্পোরেট সংস্থাসমূহকে করছাড় দিয়ে জনগণের আন্দোলন সংগ্রামকে দুর্বল করতে ধর্ম-বর্ণ ও ভাষার ভিত্তিতে বিভাজনের রাজনীতি অবাধে চালাতে চাইছে। ভুলে গেলে চলবে না অযোধ্যায় রাম মন্দির তৈরি করার জন্য সারাদেশে ভাবাবেগ তৈরি করতে বেশ কিছুদিন ধরে প্রচার চলছে, বিভিন্ন রাজ্য থেকে জল ও মাটি সংগ্রহ করা হয়েছে। আজ সেই বহু বিজ্ঞাপিত রাম মন্দিরের শিলান্যাস করা হবে। কি হবে কে জানে।

অন্যদিকে রাজ্যে তৃণমূল সরকার আকণ্ঠ দুর্নীতিতে ডুবে থেকে মিথ্যা ভাষণ দিয়ে শ্রমিক কৃষকের স্বার্থবিরোধী কার্যকলাপ চালিয়ে এক কঠিন পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। সুকৌশলে এক ভিন্ন ধরনের বিভাজনের নীতি প্রয়োগ করে তৃণমূল রাজ্য সরকার পরিচালিত হচ্ছে। কোভিড ১৯— করোনা ভাইরাসের আক্রমণ থেকে রাজ্যের জনগণকে বাঁচানোর জন্য সর্বদলীয় সভার মতামতকে গুরুত্ব না দিয়ে টেস্টের সংখ্যা বহুগুণ বাড়ানোর পরিবর্তে 'করোনাকে কোলবালিশ করে শোওয়া'র নিদান দেওয়া হয়েছে। এখন আবার শুরু হয়েছে রেশন ও আমফানের টাকা পয়সা লুট, ত্রাণের অর্থ নিয়ে খুন খারাপির পরিবেশ। মানুষের জীবনে এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। তাই বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেস বিরোধী প্রচার ধারা যুগপৎ অব্যাহত রেখে জনগণের সঙ্গে জীবন্ত প্রচারের মধ্যে দিয়ে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলতে অগ্রাধিকার দিতেই হবে। করোনা ভাইরাসের আক্রমণ থেকে বাঁচতে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে স্বাস্থ্যবিধি মান্য করেই এই কাজে আমাদের সকলকে ব্রতী হতে হবে।

আজ, কমরেড মুজফ্‌ফর আহম্‌দের জন্মদিনে আমাদের শপথ নিতে হবে। ধর্মনিরপেক্ষ ভারত রাষ্ট্রের কাঠামোকে রক্ষা করতে, ভারতে বিভিন্ন ধর্ম, বিভিন্ন বর্ণ, বিভিন্ন জাতি এবং বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের ঐক্যের মেলবন্ধনকে দৃঢ় করার লক্ষ্যে পথ চলাই হবে আমাদের আজকের দিনের শপথ। 

গণশক্তি, ৫আগস্ট, ২০২০

20200729

মুজফ্‌ফর আহ্‌মদ পুরস্কার পাচ্ছে তিনটি বই


২০২০ সালের মুজফ্‌ফর আহ্‌মদ স্মৃতি পুরস্কারের জন্য ডাঃ শঙ্করকুমার নাথ, মানবেন্দ্রনাথ সাহা এবং সুচেতনা চট্টোপাধ্যায়ের লেখা তিনটি বই মনোনীত হয়েছে। আগামী ৫ আগস্ট কমরেড মুজফ্‌ফর আহ্‌মদের ১৩২তম জন্মদিবসে মুজফ্‌ফর আহ্‌মদ স্মৃতি পুরস্কার কমিটির পক্ষ থেকে তাঁদের এই পুরস্কার প্রদান করা হবে। বাংলা ভাষায় ডাঃ শঙ্করকুমার নাথের লেখা ‘অক্ষয়কুমার দত্ত: বিজ্ঞান ভাবনার পথিকৃৎ’ বইটি এবং মানবেন্দ্রনাথ সাহার লেখা ‘মৃণাল সেন: চলচ্চিত্রের সন্ধানে’ বইটি মনোনীত হয়েছে এই পুরস্কারের জন্য। ইংরেজি ভাষায় সুচেতনা চট্টোপাধ্যায়ের লেখা ‘ভয়েস অব কামাগাতা মারু: ইম্পিরিয়াল সারভেইলেন্স অ্যান্ড ওয়ার্কার্স ফ্রম পাঞ্জাব ইন বেঙ্গল’ বইটি মনোনীত হয়েছে এই পুরস্কারের জন্য।

গণশক্তি, ২৯ জুলাই, ২০২০



20170804

Ahmad, Muzaffar 1889-1973


Ahmad, Muzaffar 1889-1973
One of the founders of the communist movement in India. Born in a middle class Muslim family in Sandip (now in Bangla Desh) on August 5, 1889. Started his career as a government employee. Edited daily Nabajug in 1920 with Qazi Nazrul Islam. Along with friend and comrade Abdul Halim, initiated communist work inside the national movement. Member of the Bengal Provincial Congress Committee during 1926-27 and 1937, and member of the All India Congress Committee during 1927-29 and in 1937. Joined the trade union movement in 1923. Was instrumental in founding various trade unions in and around Calcutta. Imprisoned several times for political and trade union activities. Sentenced to four years rigorous imprisonment in Kanpur Conspiracy Case in 1924. Released soon due to severe illness. One of the founders of the Workers’ and Peasants’ Party. Edited its organ, Ganavani.    Joined the communist conference in Kanpur in 1925 and was elected to the Presidium of the CPI when it was reorganized in 1927. Was elected Vice-President of AITUC at the Jharia session in 1928. Convicted in the Meerut Conspiracy Case. Released in 1936. Elected President of the All India Kisan Sabha in 1936. Founded National Book Agency, the Party’s publishing house, and Ganashakti press. Author of several books, including his autobiography, Myself and the Communist Party of India, and Qazi Nazrul Islam Smritikatha. Was a member of the Central Committee of the Communist Party of India (Marxist) at the time of his death in December 18, 1973.




20161028

Early Indian Communists and their Historian: An Interview with Suchetana Chattopadhyay


21st October 2016

Suchetana Chattopadhyay, who teaches at Jadavpur University in Kolkata, has been producing some of the most important work on early Communist history. Her first book – An Early Communist: Muzaffar Ahmad in Calcutta, 1913-1929 (Tulika- http://mayday.leftword.com/book/an-early-communist/9788189487935/,2011), traces not only the early life of  Kakababu but also the world of colonial and radical Calcutta. The book was reviewed when it came out by Vijay Prashad in Frontline (http://www.frontline.in/navigation/?type=static&page=flonnet&rdurl=fl2818/stories/20110909281807500.htm ). Most recently, Chattopadhyay has contributed an essay for our own new volume – Communist Histories (http://mayday.leftword.com/book/communist-histories/9789380118338/).Her project in this volume is in the early M. N. Roy and his activities in Bengal before he left for the Americas. It is a captivating article about a young man trying to break away from his roots, being pushed by colonial suffocation towards some form of action, and then, of course, decamping for the United States and Mexico where he gets influenced by Marxism into Communism. Here, Prof. Chattopadhyaya tells the LeftWord Books blog about her work:


Could you tell us a little about your book on Muzaffar Ahmad?

My book on Muzaffar Ahmad, based on my doctoral research, dealt with the social origins of communism in Bengal and Calcutta (Kolkata). By delving into the little-known convergence of the world of impoverished Bengali Muslim intellectuals and working-class protests against capital and empire of the late 1910s and the early 1920s, this was an attempt to grasp the urban roots (with hidden rural compulsions) of early communism in a region where movements based on Marxism-Leninism as an internationalist current of social liberation has left an indelible imprint on local society. I have situated Muzaffar Ahmad (1889-1973) in an urban milieu turned upside down by world war (1914-18) and the impact of the Bolshevik Revolution (1917), and comparable to tendencies visible in other colonial/semi-colonial metropolitan centers from Cairo to Shanghai. By taking his early life from 1913 to 1929 as a frame, I have offered an understanding of the times and the changing contours of social and political activism in the city which propelled Muzaffar Ahmad and others towards a politics of class, a space beyond dominant political identities of nation and community. In the process, I have also offered a social interpretation and detailed history of Workers and Peasants Party (1926-1929), the first socialist organization in Bengal and open association of the banned Communist Party of India (CPI). In this sense, the book is a partial biography of an early communist from the colonial world, a history of the early communist movement in Bengal, an account of the panic-driven character of imperial surveillance on early communism in India and a conscious exercise to recover an aspect of the city which is unknown, neglected and suppressed in mainstream historical treatments of Calcutta.

What drew you to write about the early M. N. Roy?

The work on Muzaffar Ahmad and early communists in Calcutta made me turn towards M.N. Roy. Roy and Muzaffar Ahmad enjoyed a vigorous correspondence during 1922-1923, the crucial factor which landed Muzaffar in jail and secured his conviction in Kanpur Bolshevik Conspiracy Case (1924), alongside S. A. Dange, Shaukat Usmani and Nalini Gupta. The M. N. Roy he came to know from the incriminating letters was very different from the original Naren Bhattacharya, a nationalist revolutionary who had left the shores of Bengal in 1915. Subsequently, he had reached California, made his way to Mexico where he helped found a communist party and joined Communist International as its representative. Roy had shed the name and politics of Naren Bhattacharya along the way. Naren Bhattacharya was making his way in and out of Calcutta in the early 1910s. This covered the immediate pre-war period when Muzaffar migrated to the city. Sometimes they lived in and traversed the same neighbourhoods or streets. Though their everyday lives and material conditions were similar, Muzaffar and Naren were unaware of each other since no political or social thread could connect them. Yet, post-war radical convulsions in the social milieu of activists and intellectuals, made them ‘discover’ each other. Muzaffar recalled having met Roy only once. By this time, Roy’s work in the Comintern and the emigre CPI was firmly behind him. Though virtual strangers, an anonymous yet compelling political bond had existed between them during the early 1920s. This made the prospect of digging up the ‘pre-history’ of their correspondence, by examining the social milieu of Naren Bhattacharya on the basis of unexplored archival records and relevant secondary literature, all the more enticing.


What are you working on now?

My current research is related to some of the themes that have emerged from my previous work on early communism, colonial surveillance and Calcutta. I am currently writing a book on the last stretch of Komagata Maru’s journey and its impact on Punjabi Sikh worker-activists in Bengal from 1914 to 1947. I have recently written on the connections between Muslim slum-dwellers facing eviction, populist pan-Islamist campaigners and the dissemination of the notion of an anti-colonial jihad in Calcutta of the 1910s. I am hoping to explore this topic further and incorporate it into a wider research I am undertaking on the social history of everyday life in early twentieth century Calcutta. I am also planning to write on the emergence of early communists in India and emigre communists from India in the years immediately following the Bolshevik Revolution. Of special interest to me is the panic they generated in British and other empires of capital and the nature of ‘intelligence-gathering’ on them.




5th August programme